নরেন্দ্র মোদির সৌদি সফর: সম্পর্ক পুনর্গঠন, কৌশলগত মৈত্রী ও মুসলিম বিশ্বের প্রতি বার্তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৫ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব সফরে গেছেন, যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী রাজতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। এই সফরটি শুধু অর্থনৈতিক বিনিয়োগেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে রয়েছে কৌশলগত সহযোগিতা, নিরাপত্তা সংলাপ এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংযোগের বিস্তার।

মূল দিকগুলো বিশ্লেষণে:

১. অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রসার

ভারত-সৌদি বিনিয়োগ ফোরাম:
মোদির সফরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিনিয়োগ ফোরাম আয়োজন করা হয় যেখানে সৌদি বিনিয়োগকারীরা ভারতের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তেল ও জ্বালানি নিরাপত্তা:
ভারত সৌদি আরবের অন্যতম বৃহৎ তেল আমদানিকারক দেশ। এই সফরে দীর্ঘমেয়াদী তেল সরবরাহ চুক্তি, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং জ্বালানি অবকাঠামোতে যৌথ বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়।

২. কৌশলগত নিরাপত্তা সহযোগিতা

সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি:
দুই দেশই চরমপন্থা ও আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ভারত চায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সৌদির সমর্থন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফোরামে।

নৌ নিরাপত্তা ও হোয়াইট সি কৌশল:
ভারত মহাসাগর এবং আরব উপসাগরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশ একটি যৌথ নৌ অনুশীলনের পরিকল্পনা করছে।

৩. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক

হজ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন:
ভারতীয় মুসলিমদের জন্য হজ ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও ডিজিটালাইজড করতে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সৌদি আরব ভারতীয় হজ যাত্রীদের জন্য কোটা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের বার্তা:
মোদির এই সফর তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অভিযোগ খণ্ডন করার কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়কে শান্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে।

৪. ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

চীন ও পাকিস্তানকে ঠেকানো:
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশীদার। তবে ভারত সৌদির সঙ্গে নিজস্ব কৌশলগত বন্ধুত্ব গড়ে তুলে ওই অঞ্চলে চীনা ও পাকিস্তানি প্রভাব হ্রাস করতে চায়।

আইসিইটি ও মধ্যপ্রাচ্য করিডোর:
ভারত-ইউএস-ইউএই-সৌদি যুক্ত “India-Middle East-Europe Economic Corridor” নিয়েও কথা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে চীনের BRI-র বিকল্প হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *