ঢাকাশনিবার , ২৬ জুলাই ২০২৫
  1. আন্তর্জাতিক
  2. খেলাধুলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. প্রযুক্তি
  6. সারাদেশ

পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পুনরুত্থান না চাইলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে- খেলাফত মজলিস

প্রতিবেদক
admin
জুলাই ২৬, ২০২৫ ৭:৪৯ অপরাহ্ণ

এম নাজমুল হক: 

ঢাকা, ২৬ জুলাই ২০২৫:  চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে আজ এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তির শক্তিশালী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইসলামী দল ও মসলক সমূহের ঐক্যের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজনমাত্র প্রার্থী দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়। খেলাফত মজলিস মনে করে রাজনৈতিক ভিন্নমত, সমালোচনা ও প্রতিযোগিতা সৃজনশীল রাজনীতির অংশ। তবে বিভাজন, বিভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক অশোভন ভাষায় আক্রমন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয় বরং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কারণ হতে পারে। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট ও সহযোগীদের বিচার ত্বরান্বিতকরণ, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ৬দফা করণীয় ঘোষণা করা হয়।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অধিবেশনের বিরতিতে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক সিরাজুল হক, মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, মুফতি আবদুল হামিদ, যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এবিএম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, ডাঃ এ এ তাওসিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, অধ্যাপক ড. আহমদ আসলাম, মাওলানা সামছুজ্জামান চৌধুরী, মাস্টার আবদুল মজিদ, অধ্যাপক মাওলানা এ এস এম খুরশীদ আলম, মাওলানা শেখ সালাহউদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব আলম, বায়তুলমাল সম্পাদক আলহাজ্ব আবু সালেহীন, সমাজকল্যাণ ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো: জহিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আবদুল করিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রিফাত হোসেন মালিক, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি শিহাবুদ্দীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট হাফেজ মাওলানা শায়খুল ইসলাম, উলামা বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আলী হাসান উসামা, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পষিদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য বৃন্দ।

খেলাফত মজলিস মহাসচিব লিখিত বক্তব্যে বলেন,

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

খেলাফত মজলিসের আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!

শুরুতেই আমরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনা শোক প্রকাশ করছি। আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া করছি। একই সরকারকে প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশের জনগণের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও প্রবল প্রত্যাশা ছিল। একই সাথে জনমানসে অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মতানৈক্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রাজনৈতিক সৌন্দর্য। রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্কলহ, ঝগড়া-বিবাদ জনমনে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সংশয়-শংকা সৃষ্টি হয়েছে। মব-এর ঘটনা সরকার ও রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উস্কানীমূলক বক্তব্য ও আশালীন ভাষা ব্যবহার রাজনৈতিক সংষ্কৃতিতে পুরোনো ধারার প্রতিচ্ছবি বয়ে বেড়াচ্ছে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। নতুন রাষ্ট্রকাঠামোর ব্যাপক সংস্কার করার চেষ্টায় নিজস্ব দর্শন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সংলাপ অব্যাহত রাখলেও মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, যে কোনো সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

ষড়যন্ত্রের সংশয় ট্রমা থেকে জাতি এখনো বের হতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত চলছে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকার পরও সরকার বিচারকে যেমন দৃশ্যমান করতে পারেনি, তেমনি প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ অনৈতিকভাবে কেবল খুনি শেখ হাসিনা ও তার দলবলকে আশ্রয় দেয়নি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ যোগাচ্ছে। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও দলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা করেছে এবং নানা ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিস মনে করে:

১। আগামী ৫ই আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।

২। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল খুন, গুম, গণহত্যা ও অপর্কমের দ্রæত বিচার করতে হবে।

৩। দ্রæততম সময়ের মধ্যে মৌলিক প্রয়োজনী সংস্কার সম্পন্ন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪। বাংলাদেশের জনগণ পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পুনরুত্থান চায় না। সে ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে খেলাফত মজলিস মনে করে রাজনৈতিক ভিন্নমত, সমালোচনা ও প্রতিযোগিতা সৃজনশীল রাজনীতির অংশ। তবে বিভাজন, বিভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক অশোভন ভাষায় আক্রমন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয় বরং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কারণ হতে পারে।

৫। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তির শক্তিশালী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইসলামী দল ও মসলক সমূহের ঐক্যের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজনমাত্র প্রার্থী দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করছে।

৬। খেলাফত মজলিস এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩০০ আসনে পর্যায়ক্রমে প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ইতোমধ্যে ১০০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আপননাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ড. আহমদ আবদুল কাদের

মহাসচিব, খেলাফত মজলিস

প্রেস ব্রিফিংয়ের পূর্বে সকাল ৯টায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার ১ম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আমীরে মজলিস মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উক্ত অধিবেশনে সংগঠনের সারাদেশের কাজের পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়াও ৫টি বিষয়ে প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো:

প্রস্তাব-১: শোক প্রস্তাব:

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশন খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাওলানা নুরুল আলম আল মামুন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আফতাব উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তর সহ-সভাপতি মাওলানা শরীফুল ইসলাম, বান্দরবন জেলা সভাপতি মাওলানা নাসির উদ্দিন, জেদ্দা মহানগরী সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হক, চিলমারী উপজেলা বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আবু তাহের, বানিয়াচং উপজেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফারুক আহমদ আনসারী, খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক এজেডএম শামসুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের ইন্তেকাল এবং সম্প্রতি উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত পাইলট, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং সকলের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করছে। উক্ত দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রæত সুস্থতা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও মহান আল্লাহর দরবারে ধৈর্য্য কামনা করছে।

প্রস্তাব-২: সংস্কার, জুলাই সনদ, বিচার, নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গ:

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ৫ আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি বাংলাদেশে যে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন জাতি প্রত্যাশা করেছিল তা আজও পূরণ হয়নি। রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করেনি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল এমন সদস্যদের সমন্বয়ে যারা সংখ্যাগারিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান রাখেন না। সাধারণ নারী সমাজের কাক্সিক্ষত প্রতিনিধিত্ব অনুপস্থিতির কারণে এই কমিশনের পেশকৃত প্রস্তাবনাগুলো জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো এই কমিশন ও তাদের প্রস্তাবনাগুলোকে বাতিল করেনি। সর্বশেষ যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে জুলাই মাস শেষ হতে চললেও এই কমিশন এখনো মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত ও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের খুনীদের একজনেরও বিচার সম্পন্ন করতে পারেনি। 

আজকের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদন বাতিল, জুলাই সনদ ঘোষণা ও জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানাচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় অধিপত্য প্রতিষ্ঠার অসুস্থ প্রতিযোগীতা বন্ধ করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে দেশপ্রেমিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-৩: চাঁদাবাজ-দখলবাজদের দৌরাত্ম্য ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গ:

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও চাঁদাবাজ-দখলবাজদের দৌরাত্ম্য চরম মাত্রায় বেড়ে গেছে। সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের একটি রাজনৈতিক দলের গোপালগঞ্জে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে তাণ্ডব চালিয়েছে। ঢাকা মিটফোর্ডে চাঁদাবাজি ও ব্যাবসায়িক আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এক প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীকে জনসম্মুখে প্রস্তর নিক্ষেপে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিগত ৬ মাসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যাবে কত ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সময়ে খুনের ঘটনা ও মামলা হয়েছে ১৯৩০টি যার দৈনিক গড় ১১। একটি বড় রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছে অর্ধশতের বেশি নিজ দলীয় নেতা-কর্মী। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৬টি। ১১০০৮ জন নারী-শিশু ধর্ষণ সহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পাড়া-মহল্লায় নেশাখোর, চোর ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে। সারাদেশে কিশোরগ্যাংয়ের অপতৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। অথচ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি নতুন বাংলাদেশের এই চিত্র কখনো কাম্য ছিল না। সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চললেও এই অপরাধ কমছে না। 

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ অবিলম্বে প্রশাসনকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে এসব অপরাধ নির্মূলে কঠোর হওয়া এবং জনমত গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-৪: ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও পশ্চিমা ভূরাজনৈতিক অপকৌশল প্রসঙ্গ:

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে টিকে থাকতে সর্বোচ্চ মদদ যুগিয়েছিল বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ডীপ স্টেট। এই খুনী সরকারের পতনের পরপর প্রথম দিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে ছিল। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারি হাই কমিশনে হামলা চালিয়েছিল। এখনো গুলি চালিয়ে ও জমি দখল করে মাঝে মাঝে সীমান্তে উস্কানী দেয়। গত দু’দিন আগেও ফেনী সীমান্তে দু’জন বাংলাদেশী নাগররিক গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। শেখ হাসিনা ও তার দলীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা কার্যক্রম সীমিত করে রেখেছে। এখনো বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে ভারত সরকার। অন্যদিকে তৈরি পোষাক খাতের শুল্ক বাড়িয়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিশেষ কিছু বিষয়ে দরকষাকষির করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে সরকার বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে। রাখাইন করিডোর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি নতুনভাবে যে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা দেশপ্রেমিক জনতাকে শংকিত করছে। 

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ ভারতকে বাংলাদেশের উপর আধিপত্যবাদী মানসিকতা পরিহার করে ন্যায্য ও সাম্যতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণের আহ্বান জানাচ্ছে। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশসমূহের সাথে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি কোন প্রকার চুক্তি-সমঝোতা থেকে বিরত থাকতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে দাবি জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-৫: মুসলিম বিশ্বে ইসরাইলী আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ:

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ তীব্র ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে যে, অর্ধশতাব্দীরও বেশি কাল ধরে ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের উপর অকথ্য নির্যাতন, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৮ অক্টোবর ২০২৩ এর পর থেকে বিগত প্রায় দু’বছর ধরে চলমান ইসরাইলী আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ৫৯ হাজারের বেশি মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার মানুষকে মারাত্মক জখম ও পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। যাদের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছেন নারী ও শিশু। এর মধ্যে হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দেশ ও দেশের বাহিরেও টার্গেট করে হত্যা করেছে বর্বর ইসরাইল। হত্যা করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশের ইসরাইল বিরোধী মুসলিম নেতৃবৃন্দকেও। গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিয়ে ইসরাইল সেখানে দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়কর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়ামান সহ পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশসমূহে ইসরাইল সরাসরি বিমান হামলা চালিয়েছে। গত জুন মাসে দু’সপ্তাহ ধরে ইরানে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজারের মত সাধারণ নাগরিক, শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ইরান পাল্টা হামলা চালিয়ে তেলআবিবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনে সক্ষম হয়েছে।

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ থেকে ইসরাইলী এসব বর্বরতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও স্থায়িত্ব কামনা করছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং গাজা পুনর্গঠনে এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্র সমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।

সর্বশেষ - প্রযুক্তি