গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনছবি: রয়টার্স

ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা শেষবার যখন সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল, তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য হন। ওই সময় দেশটির বিশাল সামরিক বাহিনীকে অনেকটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল; তারা ছিল সেকেলে এবং সীমান্তে হুমকি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত।

পাকিস্তানের হাতে ২০১৯ সালে একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় লজ্জায় পড়ে যায় দেশটি। এতে ভারতের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামরিক বাহিনীতে কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। অস্ত্র কিনতে নতুন আন্তর্জাতিক মিত্র খুঁজে নেন। দেশীয়ভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ান। এসব প্রচেষ্টায় ঠিক কতটুকু পরিবর্তন এসেছে, হয়তো খুব শিগগিরই তার পরীক্ষা হবে।

বর্তমানে ভারত তিন বাহিনীকেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে:

সেনাবাহিনী: জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে অতিরিক্ত ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে। কিছু বিশেষ বাহিনী (Special Forces) সরাসরি সীমান্ত এলাকায় কাজ করছে।

বিমান বাহিনী: যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নিয়মিত টহল দিচ্ছে। কিছু এয়ারবেসকে “উচ্চ প্রস্তুতি অবস্থায়” রাখা হয়েছে।

নৌবাহিনী: আরব সাগরে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় নৌ কমান্ডকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এক কথায়, ভারতের সামরিক বাহিনী শুধু সীমান্ত নয়, আকাশ ও সমুদ্র পথেও চরম সতর্কতায় আছে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা রাশিয়া থেকে কেনা পাঁচটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে তিনটি মোতায়েন করেছে। ফ্রান্স থেকে কেনা ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের সবগুলো বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। আরও ২৬টি কেনার পরিকল্পনা করছে। ভারত এখন দেশীয়ভাবে নির্মিত অনেকগুলো যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত করছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস জুড়েই রয়েছে উত্তেজনা, যুদ্ধ ও সংঘাত। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে দুই দেশের মধ্যে আবারও একটি নতুন রকমের চাপ তৈরি হয়েছে। সীমান্তে ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর যেমন আসছে, তেমনি কূটনৈতিক স্তরেও চলছে কথার লড়াই। এই পটভূমিতে ভারতের সামরিক বাহিনী এখন একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে — শক্তি প্রদর্শন ও সংযমের ভারসাম্য বজায় রাখা।

উত্তেজনার বর্তমান প্রেক্ষাপট

কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) বরাবর গোলাগুলি ও অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়ছে। ভারত অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিরা সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করছে এবং পাকিস্তানি সেনারা তাদের সাহায্য করছে। জবাবে ভারত সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে, বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে, আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাল্টা হামলাও চালিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *