
২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল, আজকের এই দিনটি বিশ্ব ইতিহাসে একটি গভীর শোকের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ, পোপ ফ্রান্সিস—জর্জ মারিও বার্গোলিও—৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ভ্যাটিকানের নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় স্থানীয় সময় সকাল ৭:৩৫-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
“একটু করুণা পৃথিবীকে কম নির্মম এবং আরও ন্যায়বান করে তোলে।”
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৩ সালে পোপ বেনেডিক্টের পদত্যাগের পর পোপ নির্বাচিত হন। তিনি ইতিহাসে প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ এবং প্রথম জেসুইট যাজক যিনি পোপ পদে অধিষ্ঠিত হন। তার এই পদের মধ্য দিয়ে একটি নতুন ধারা সূচিত হয়—একজন বিনয়ী, সংবেদনশীল এবং জনমানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম ধর্মীয় নেতা।
তার নেতৃত্বে চার্চে উদারতার বাতাস
“পৃথিবী আমাদের বলে সাফল্য, ক্ষমতা ও অর্থ খুঁজতে; আর ঈশ্বর বলেন বিনয়, সেবা ও ভালোবাসা খুঁজতে।”
পোপ ফ্রান্সিস শুধু ক্যাথলিক চার্চের নয়, বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। তিনি গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়েছেন। তিনি LGBTQ+ সম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীলতা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপেও ভূমিকা রেখেছেন।
স্বাস্থ্য ও শেষ দিনগুলো
গত কয়েক বছর ধরে তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি বারবার শ্বাসযন্ত্রজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং শেষদিকে ডাবল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। যদিও তিনি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন, মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন তাঁর জনগণের কাছে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
পোপের মৃত্যুতে পুরো বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপ্রধান, ধর্মীয় নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ মানুষ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সবাই স্বীকার করছেন—পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন শান্তির দূত, বিনয়ের প্রতীক এবং একজন প্রকৃত মানবতাবাদী।
এরপর কী?
পোপের মৃত্যুর পর ভ্যাটিকানের নিয়ম অনুযায়ী ‘কনক্লেভ’ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কার্ডিনালরা মিলিত হয়ে নতুন পোপ নির্বাচন করবেন। তবে তার উত্তরসূরি যেই হোন না কেন, পোপ ফ্রান্সিসের রেখে যাওয়া মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আর মূল্যবোধ চিরকাল ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।