
২০২৫ সালে আবারও নিজেদের অবস্থান জানাতে এবং দীর্ঘদিনের দাবিগুলো সামনে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ধর্মীয় ভাবাবেগ, রাজনৈতিক উত্তাপ ও আন্তর্জাতিক মুসলিম ইস্যুগুলোর মিশেলে গঠিত তাদের কর্মসূচিগুলো ইতিমধ্যেই দেশের রাজনীতি ও সামাজিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে।
মূল কর্মসূচি: ৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ
হেফাজতে ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ শুধু একটি ধর্মীয় জমায়েত নয়—বরং এটি তাদের জন্য একটি রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানোর কৌশল।
এই মঞ্চ থেকে তারা তাদের দাবি জানাবেন এবং সরকার ও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
তাদের দাবি ও উদ্দেশ্য কী?
হেফাজতের মুখপাত্ররা কয়েকটি বড় দাবির কথা বারবার তুলে ধরেছেন—
- ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ঘটনার বিচার ও মামলা প্রত্যাহার
তারা মনে করে, ওই সময়কার অভিযানে বহু নিরীহ আলেম ও ছাত্র নিহত বা আটক হয়েছিলেন। - নারী নীতিমালা ও উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের দাবি
তারা মনে করেন, এসব নীতিমালায় ইসলাম বিরোধী প্রস্তাব রয়েছে। - ভারতের মুসলিম নির্যাতন ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ
আন্তর্জাতিক মুসলিম উম্মাহর প্রতি সংহতি জানিয়ে হেফাজত ২৫ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। - আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি
এই দাবি সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর, যেখানে তারা ক্ষমতাসীন দলটিকে “গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট দল” বলে আখ্যা দিয়েছে।
কেন আবার সক্রিয়?
হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মসূচি দেখে স্পষ্ট, তারা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং রাজনৈতিক ও জনমত প্রভাবিত করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে।
সমালোচকরা বলছেন—হেফাজতের এই তৎপরতা আবারও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
তাদের বক্তব্যের পেছনে ভিন্ন বার্তা?
যদিও হেফাজত নিজেদের দাবি করছে ‘অরাজনৈতিক’ ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে, কিন্তু রাজনৈতিক ভাষ্য, বিক্ষোভ ও ক্ষমতাসীন দলকে নিষিদ্ধের দাবি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করে।
বিশেষ করে যখন তারা আন্তর্জাতিক ইস্যু (যেমন ফিলিস্তিন, ভারত) নিয়েও বাংলাদেশের রাজপথে নামার ঘোষণা দেয়, তখন বোঝা যায়—তাদের প্রভাব দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের ভাবনার সঙ্গেও যুক্ত।
শেষ কথা
হেফাজতে ইসলামের এই নতুন কর্মসূচি শুধু তাদের দাবির প্রকাশ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমীকরণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশের তরুণ সমাজ, সাধারণ মুসলমান এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন দেখছেন—এই সংগঠন কীভাবে মাঠে নামে, এবং কতটা প্রভাব রাখতে পারে।