19 Apr 2025, Sat

২০২৫ সালে ভারতের সাম্প্রতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে আলোচিত ও শঙ্কাজনক একটি বিষয় হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়নের ধারাবাহিকতা। একদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা, অন্যদিকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর উসকানিতে মুসলিম জনগোষ্ঠী বারবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

১. আইন ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চাপে রাখা

ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী আইন ২০২৫-এর মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পত্তি রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার পথ তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। এই আইনের বিরুদ্ধে যখন মুসলিমরা প্রতিবাদে নামে, তখন প্রশাসনের জবাব হয় কঠোর – গুলি, লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার। যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনজন নিহত হয়। এটা ছিল শুধুমাত্র একটি উদাহরণ।

২. পরিকল্পিত উসকানি ও সহিংসতা

মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ‘বজরং দল’-এর নেতৃত্বে মুসলিমদের বাড়িঘরে পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটে। পুরো পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই ধরনের হামলা শুধু শারীরিক সহিংসতা নয়, বরং মানসিক নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক তৈরি করে।

৩. ধর্মীয় উৎসবেও মিলছে না নিরাপত্তা

রমজান মাসের মতো একটি পবিত্র সময়ে মুসলিমরা নিরাপদভাবে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারছে না। এমনকি যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে – যা বাকস্বাধীনতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

৪. ইতিহাস ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি

নাগপুরে আওরঙ্গজেবের সমাধি ঘিরে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভ এবং পরবর্তীতে সহিংসতা দেখিয়েছে কিভাবে ইতিহাস ও ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এই সহিংসতায় বহু পুলিশসহ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন এবং এলাকাজুড়ে কারফিউ জারি করতে হয়েছে।

৫. প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশসহ কিছু প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেও, ভারতীয় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে করে শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও চাপ পড়ছে।


২০২৫ সালের চিত্র বলে দেয় যে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও গণতন্ত্রের যে মূল্যবোধ নিয়ে ভারত একসময় গর্ব করত, তা আজ অনেকটাই দুর্বল। মুসলিমদের প্রতি এই ধারাবাহিক সহিংসতা শুধু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, বরং পুরো ভারতের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *