19 Apr 2025, Sat

টাঙ্গাইলে মায়ের সন্তান বিক্রি: মোবাইল ও জুতার বিনিময়ে এক করুণ বাস্তবতা

টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। এক হতদরিদ্র মা, যার বয়স আনুমানিক ২৫-৩০ বছর, দীর্ঘদিন ধরেই অভাব-অনটনের মধ্যে বাস করছিলেন। তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায় বহু আগেই, এবং সন্তান লালন-পালনের ভার ছিল শুধুমাত্র তার একার ওপর।

প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নারী প্রায়ই বলে থাকতেন যে তিনি সংসার চালাতে পারছেন না। কিছুদিন আগে, তার হঠাৎ করে একটি মোবাইল ফোন ও নতুন জুতা দেখা যায়, যা সবাইকে অবাক করে দেয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই মা তার একমাত্র সন্তানকে বিক্রি করে এই জিনিসগুলো কিনেছেন মাত্র কয়েক হাজার টাকায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং মা বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।


মনস্তাত্ত্বিক দিক:

এই ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখা যায়, এটি কেবল অভাবের ফল নয়, বরং এক ধরনের মানসিক ভঙ্গুরতা ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার প্রতিফলন। একজন মা সহজভাবে সন্তানের চাহিদা ও ভবিষ্যতের চেয়ে নিজের স্বল্পমেয়াদি প্রয়োজনকে বড় করে দেখেন তখনই, যখন তিনি নিজেকে অসহায়, নিঃসঙ্গ ও পথহারা অনুভব করেন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ বাস্তবতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না। তারা হয়তো নিজের জীবনেও বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পান না, ফলে অন্যের জীবন, এমনকি নিজের সন্তানের জীবনও তুচ্ছ মনে হয়।


সামাজিক ব্যর্থতা:

এই ঘটনাটি কেবল একজন মায়ের নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
কিছু প্রশ্ন উঠে আসে:

স্থানীয় সমাজকর্মীরা কোথায় ছিলেন?

কেন এই মায়ের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি?

দারিদ্র্য বিমোচনের সরকারি প্রকল্পগুলো এমন পরিবারে পৌঁছায় না কেন?


আইনি প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী, সন্তান বিক্রি করা মানবপাচার আইনের আওতায় পড়ে, এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এমন মায়েরা ‘অপরাধী’ কম, ‘ভুক্তভোগী’ বেশি।

তবে প্রশাসনকে এক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়—একদিকে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অন্যদিকে মায়ের মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।


সম্ভাব্য সমাধান ও করণীয়:

  1. হেল্পলাইন চালু ও প্রচার: এমন মায়েরা যেন বিপদের সময় ফোন করতে পারেন।
  2. স্থানীয় NGO বা সমাজকর্মীদের দায়িত্ব: নিয়মিত খোঁজ রাখা, দরিদ্র পরিবার শনাক্ত করে সহায়তা প্রদান।
  3. মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং সেবা: থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে।
  4. পাবলিক অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন: সন্তান বিক্রি বা শিশু পাচার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
  5. দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারদের জন্য নগদ সহায়তা ও কাজের সুযোগ তৈরি।

এই ঘটনা কেবল একটি “সংবাদ” নয়—এটি সমাজের গভীরে থাকা ব্যর্থতার চিত্র। যেখানে একজন মা নিজের রক্ত-মাংসের সন্তানকে সামান্য জিনিসের বিনিময়ে দিয়ে দেন, সেখানে আমাদের আত্মসমালোচনা করা দরকার।

আমরা যদি এখনই এইসব ইঙ্গিতগুলোকে গুরুত্ব না দিই, তাহলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *