19 Apr 2025, Sat

পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধকালীন সম্পদ ফেরত চায় বাংলাদেশ: ন্যায্যতার প্রশ্নে জোরালো কূটনীতি

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও, বহু অর্থনৈতিক সম্পদ আজও বাংলাদেশ ফেরত পায়নি। সেই সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগ আবারও সামনে এসেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের কাছে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার ফেরতের দাবি জানাতে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও নৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।


দাবির পেছনের ইতিহাস

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্য করে আসছিল। তখনকার রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে, কিন্তু ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। স্বাধীনতার পর এসব সম্পদের অনেকটাই সেখানে আটকে পড়ে যায়।


মূল দাবিগুলোর বিবরণ

১. ভোলা ঘূর্ণিঝড় তহবিল (১৯৭০)

ভোলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর আন্তর্জাতিক সাহায্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার এসেছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য।

এই তহবিল লাহোরে সরিয়ে নেওয়া হয় যুদ্ধের সময়।

এখনো তা ফেরত দেওয়া হয়নি।

২. প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সঞ্চয়পত্র

স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের সঞ্চিত অর্থও পাকিস্তান রেখে দেয়।

এতদিনেও তা ফেরত দেয়নি।

৩. রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখা

প্রায় ১.৫৭ কোটি টাকা পাকিস্তান সরকার শেয়ারে রূপান্তর করে রাখে।

কিন্তু কোনো লভ্যাংশ বা মূলধন এখনো বাংলাদেশকে দেয়নি।


বাংলাদেশের যুক্তি

পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৫৬% এর বেশি।

রপ্তানি আয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অবদান ছিল ৫৪%।

সেই হিসেবে পাকিস্তানের মোট সম্পদের অন্তত অর্ধেক ছিল বাংলাদেশের প্রাপ্য।


বর্তমান উদ্যোগ

১৭ এপ্রিল ২০২৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দাবি উত্থাপন করা হবে।

এরপর সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনাতেও বিষয়টি থাকবে।

এটি বিগত ১৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রথম সংলাপ।


এই দাবির গুরুত্ব

অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা: স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও বকেয়া হিসাব রয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে মর্যাদা রক্ষা: বাংলাদেশ তার অধিকার নিয়ে দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছে।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি: পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ার পূর্বশর্ত হতে পারে এই হিসাব মিটানো।


উপসংহার

বাংলাদেশের এই দাবি শুধু আর্থিক নয়, এটি ইতিহাস, ন্যায্যতা এবং জাতীয় মর্যাদার প্রশ্ন। বহু বছর ধরে চেপে রাখা এই দাবিকে সামনে এনে সরকার এক সাহসী কূটনৈতিক বার্তা দিচ্ছে—বাংলাদেশ কোনো কিছু ভুলে যায়নি, বরং উপযুক্ত সময়ে সঠিক দাবি জানাতে জানে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *