আরব কেন সরাসরি ফিলিস্তিনের পক্ষে যাচ্ছে না – ২০২৫ সালের বাস্তবতা
হালনাগাদ: এপ্রিল ২০২৫
লেখক: মাজেদুর রহমান
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি সবসময়ই জটিল। তবে ২০২৫ সালে এসে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে বহু মানুষ প্রশ্ন করছেন—সৌদি আরব কেনো সরাসরি ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে আমরা দেখতে পাবো—এর পেছনে রয়েছে কূটনৈতিক ভারসাম্য, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং অর্থনৈতিক কৌশলের মতো বহুস্তরীয় বাস্তবতা।
১. কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশল
সৌদি আরব বর্তমানে একটি ব্যালান্সিং গেম খেলছে।
একদিকে তারা চায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে, অন্যদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের আবেগকেও উপেক্ষা করতে পারছে না। তাই তারা সরাসরি কোনো পক্ষে না গিয়ে ‘মধ্যপন্থা’ অনুসরণ করছে।
২. ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পেছনের গল্প
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের গুঞ্জন বহুদিন ধরেই চলছে।
২০২৩-২৪ সালের মধ্যে বহু আলোচনার পর ২০২৫ সালেও সৌদি আরব জানিয়েছে—তারা তখনই ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করবে, যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও বাস্তববাদী রাজনীতি
যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অস্ত্র সরবরাহকারী মিত্র।
সৌদি আরব চায় না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে। এ কারণে তারা ট্রাম্পের “গাজা প্ল্যান” প্রত্যাখ্যান করলেও খুব হিসেব করে, কূটনৈতিক ভাষায় তা করে যাচ্ছে।
৪. মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্ব ও আধুনিক কৌশল
বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (MBS) ধর্মীয় আবেগের বদলে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত স্বার্থকে প্রাধান্য দেন।
তিনি ‘ভিশন ২০৩০’ এর মাধ্যমে সৌদি আরবকে আধুনিক, প্রযুক্তি-নির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার পথে হাঁটছেন না।
৫. আন্তর্জাতিক ইমেজ ও বিনিয়োগ আকর্ষণ
সৌদি আরব এখন বৈশ্বিক বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্র হতে চায়।
যুদ্ধ, সহিংসতা বা সঙ্কটময় পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চায় না। তাই তারা শান্তিপূর্ণ ও কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে।
উপসংহার: “নিরব সমর্থন” নাকি কৌশলী নিরপেক্ষতা?
সৌদি আরব হয়তো সরাসরি ফিলিস্তিনের হয়ে যুদ্ধ করছে না, কিন্তু তারা এখনো “দুই রাষ্ট্র সমাধান”-এর পক্ষেই আছে।
তাদের কৌশল হলো—সমর্থন দেওয়া, কিন্তু এমনভাবে যাতে নিজেদের স্বার্থও সুরক্ষিত থাকে।