ফিলিস্তিন—এই পবিত্র ভূমি শুধু ইতিহাস আর রাজনীতির গল্প নয়, এটি ঈমান ও আখিরাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে জায়গার বিশেষ স্থান রয়েছে, সেটি হলো বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম)। হাদিসে এক স্পষ্ট বার্তা আছে: কিয়ামতের আগে একটি দল থাকবে, যারা সত্যের ওপর থাকবে, যাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। তারা এই ভূমিতে ন্যায়ের বিজয় ঘটাবে। এই দল কারা? তাদের পরিচয় কী? আসুন হাদিসের আলোকে জানি।
১. চিরসত্যের দল: যারা ভীত হয় না, পিছপা হয় না
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আমার উম্মতের একটি দল সবসময় সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের সাহায্য করবে না কিংবা বিরুদ্ধতা করবে, তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত বা বিজয়) আসে। তারা থাকবে বাইতুল মুকাদ্দাস ও তার আশেপাশে।”
— সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯২০
এই হাদিস স্পষ্টভাবে বলছে—একটি ‘তাইফাহ’ (দল) সবসময় থাকবে, যারা হক পথে অবিচল থাকবে। তারা থাকবে জেরুজালেম (আল-কুদস) ও তার চারপাশে। শত্রুরা তাদের ঘিরে ধরলেও, তারা দমে যাবে না।
২. যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষা, ঈমানের প্রতিচ্ছবি এই দল শুধু মুখে ঈমানে বিশ্বাসী নয়, তারা যুদ্ধের ময়দানে সাহস দেখাবে, আত্মত্যাগ করবে, তবুও সরে যাবে না। তাদের নেতৃত্বে থাকতে পারে মাহদি (আ.) অথবা ঈসা (আ.) এর যুগের সৈনিকরা। কেউ কেউ বলেন, এই দল আজও আছে—নির্যাতিত, কিন্তু অটুট।
“গাযওয়ায়ে হিন্দ” থেকে শামের ময়দান হাদিসে ইঙ্গিত আছে যে, কিছু মুজাহিদ হিন্দুস্থান থেকে যুদ্ধ করে শামে (ফিলিস্তিন-সিরিয়া অঞ্চলে) পৌঁছাবে।
“একটি দল হিন্দুস্থানে জিহাদ করবে… তারপর তারা ফিরে আসবে এবং ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) কে শামে পাবে।”
— নাঈম ইবনে হাম্মাদ, আল-ফিতান
এ থেকে বোঝা যায়, বিজয় একটি ধারাবাহিক পথ। বিভিন্ন অঞ্চলের ঈমানদাররা একত্র হয়ে ন্যায়ের পতাকা উঁচিয়ে রাখবে।
৪. আল-কুদস হবে বিজয়ের চূড়া, অন্যায়ের পতন এই দল হবে ন্যায়, ধৈর্য, এবং আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসার প্রতীক। তারা হয়তো সংখ্যায় কম হবে, প্রযুক্তিতে দুর্বল হবে, কিন্তু তারা থাকবে হকের ওপর, আর আল্লাহর সাহায্য তাদের সাথে থাকবে।
৫. এই দল কি আজকের ফিলিস্তিনিরা? অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদ মনে করেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে যে প্রতিরোধ চলছে, সেটিই সেই হাদিসে বর্ণিত সত্যের দল হতে পারে। কারণ:
তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে,
তারা হকের কথা বলছে,
তারা ঘরবাড়ি হারাচ্ছে, কিন্তু ঈমান হারাচ্ছে না।
উপসংহার: হাদিস আমাদের জানায়—এই দুনিয়ায় শেষ পর্যন্ত জিতবে হক ও ইনসাফ। ফিলিস্তিনের মাটি সাক্ষী রাখবে, কারা ছিল সত্যের সৈনিক। আজ যারা চোখে অশ্রু নিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ করছে—তাদের নিয়েই হয়তো বলা হয়েছে: “তাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।” এ কথাই আমাদের আশা দেয়, প্রেরণা জোগায়, এবং মনে করিয়ে দেয়—সত্যের বিজয় হবেই, ইনশাআল্লাহ