ইসরায়েল এমন একটা রাষ্ট্র যেটা নিজের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি আর যুদ্ধকে একসাথে গেঁথে। এটা শুধুই কিনে আনা অস্ত্র নয়—একটা পুরো ইকোসিস্টেম।
১. যুক্তরাষ্ট্র: সবচেয়ে বড় বন্ধু ও অস্ত্রের মূল জোগানদাতা
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অস্ত্রের ব্যাংক বললেও কম বলা হয়।
আমেরিকা প্রতিবছর ইসরায়েলকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়, যা তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাজেটের একটা বড় অংশ।
এই অর্থের অনেকটা সরাসরি মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি যেমন Lockheed Martin, Raytheon-এর কাছ থেকে অস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ
কেন এত সাহায্য করে?
ইসরায়েলকে তারা দেখে “মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ঘাঁটি” হিসেবে।
ইসরায়েল মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করে ইরান, সিরিয়া বা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে।
মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েলি লবির (AIPAC) ব্যাপক প্রভাব।
২. নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন: যুদ্ধক্ষেত্রই তাদের ল্যাবরেটরি
ইসরায়েল শুধুই অস্ত্র নেয় না, নিজেরাও বানায়—আর সেটা তারা গাজা বা পশ্চিম তীরে ব্যবহার করে পরীক্ষিত করে।
নিজস্ব বিখ্যাত অস্ত্র কোম্পানি:
Elbit Systems – ড্রোন, হেলমেট প্রযুক্তি, সাইবার ও নজরদারি।
Rafael – Iron Dome ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
Israel Aerospace Industries (IAI) – যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট, ড্রোন।
ব্যবহার করার পর তারা বলে: “Combat Tested”
মানে: এই অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে ফলাফল প্রমাণিত।
ফলে বিশ্ববাজারে তাদের অস্ত্রের দাম বেড়ে যায়।
৩. যুদ্ধ বানায় অস্ত্র বাজার
ইসরায়েলের অস্ত্র শিল্প অনেক সময় গাজায় হামলা বা সীমান্ত সংঘর্ষ ব্যবহার করে দেখায় যে—তাদের অস্ত্র কত কার্যকর।
এই ব্যবহার তাদের অস্ত্রকে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করে।
তাই অনেকে বলে:
“যুদ্ধ ও বোমার নিচে দাঁড়িয়ে ইসরায়েল নিজের অস্ত্র বেচে”।
৪. ইউরোপীয় দেশগুলো: নৈতিক দায় না বাস্তব সমঝোতা?
জার্মানি:
ইসরায়েলকে সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ দেয় প্রায় অর্ধেক ভর্তুকি দামে।
কারণ হিসেবে বলে: “হলোকাস্টের জন্য আমরা দায়ী” – তাই ইসরায়েলের অস্ত্র চাহিদা পূরণ করাটাও যেন একটা দায়িত্ব।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি:
সীমিত পরিসরে অস্ত্র সরবরাহ করে, আবার অনেক সময় বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে।
৫. গোপন সমঝোতা ও অস্ত্র বিনিময় চুক্তি
অনেক সময় সরাসরি নাম না বলেও, ইসরায়েল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে—
তুমি আমাকে প্রযুক্তি দাও, আমি তোমার জন্য নজরদারি ড্রোন বানাবো।
এভাবেই এক ধরণের অস্ত্র বিনিময়ের জাল গড়ে উঠেছে।
৬. আন্তর্জাতিক বাজারে অস্ত্র রপ্তানিও করে ইসরায়েল
তাদের ড্রোন, সাইবার অস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি এখনো বহু দেশে বিক্রি হয়:
ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, আজারবাইজান, হাঙ্গেরি সহ অনেক দেশ।
অনেক দেশে ইসরায়েল সরাসরি সৈন্য পাঠায় না, কিন্তু সফটওয়্যার ও সেন্সর বিক্রি করে।
ইসরায়েল যতটা যুদ্ধ করে, তার চেয়েও বেশি যুদ্ধ ব্যবসা করে।
তারা যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করে সেটা পরীক্ষিত পণ্য বানায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে অর্থ ও প্রযুক্তি নেয়।
আবার সেই প্রযুক্তি নিজে বানিয়ে বাকি পৃথিবীতে বিক্রি করে।
এটাই হলো ইসরায়েলের অস্ত্রশক্তির মূল রহস্য:
“যুদ্ধ চালিয়ে অস্ত্র বানায়, আর অস্ত্র বেচে নতুন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।”