
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজ সাধারণত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে গভীর সমুদ্রে যাওয়াই বেশি নিরাপদ।
প্রথমত, বন্দর বা উপকূলের কাছাকাছি থাকা জাহাজের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যখন ঘূর্ণিঝড় আসে, তখন বাতাসের গতি প্রচণ্ড বেড়ে যায়, সমুদ্রের ঢেউ ভয়ানক রূপ নেয়, আর উপকূলে জলোচ্ছ্বাস হয়। বন্দর বা অগভীর পানিতে থাকা জাহাজগুলো এসব বিপদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ, সেখানে তাদের নোঙর করার জায়গা কম থাকে, আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে জাহাজ তীরে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, গভীর সমুদ্রে ঢেউ বড় হলেও তা কম বিপজ্জনক। সাধারণভাবে, গভীর সমুদ্রে ঢেউয়ের উত্থান-পতন স্বাভাবিকভাবেই ঘটে, কিন্তু সেখানে ঢেউ ততটা বিধ্বংসী হয় না যতটা উপকূলের কাছে হতে পারে। উপকূলে ঢেউগুলো বাঁধা পেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা নোঙর করা বা স্থির থাকা জাহাজের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
তৃতীয়ত, গভীর সমুদ্রে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। জাহাজের ক্যাপ্টেন খোলা সমুদ্রে বাতাস ও ঢেউয়ের বিপরীতে নেভিগেট করতে পারেন, যা ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সামলানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীতে, উপকূলে নানান বাঁধা (জেটি, কন্টেইনার, অন্য জাহাজ, কম পানির গভীরতা) থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
চতুর্থত, জোয়ার-ভাটার সমস্যাও একটি কারণ। উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার-ভাটার কারণে পানির স্তর ওঠানামা করে, যা ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজের জন্য আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে এ ধরনের পরিবর্তন তেমন প্রভাব ফেলে না।
তাই, যদি জাহাজের জন্য বন্দরে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ক্যাপ্টেনরা সিদ্ধান্ত নেন গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ার। সেখানে জাহাজের স্ট্রাকচার ও ডিজাইন অনুযায়ী ঢেউ মোকাবিলা করা সহজ হয়, আর জাহাজটিও তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ থাকে।তবে, ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে জাহাজ বন্দরেই থাকবে নাকি গভীর সমুদ্রে যাবে।