
রোজার ঈদের আমল (ঈদুল ফিতরের করণীয় ও সুন্নত সমূহ)
রমজানের এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়ালের ১ তারিখে মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। এটি শুধু আনন্দের দিন নয়, বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ও আত্মশুদ্ধির একটি সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য কিছু সুন্নত ও করণীয় আমল নির্ধারণ করে গেছেন।
ঈদুল ফিতরের দিনের করণীয় ও সুন্নত আমল
১. ঈদের আগের রাতে ইবাদত করা
ঈদের আগের রাত (চাঁদ রাত) ইবাদতের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) ইবাদতে কাটায়, তার হৃদয় সেদিন মৃত হবে না, যেদিন সকল হৃদয় মৃত হবে।” (ইবন মাজাহ)
আমল:
কুরআন তিলাওয়াত
নফল নামাজ
জিকির ও দোয়া
২. ঈদের দিন গোসল করা
ঈদের দিনে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করা সুন্নত।
হাদিস:
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন—
“নবী (সা.) ঈদের দিন গোসল করতেন।” (ইবন মাজাহ)
৩. সুন্দর ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা
নবী (সা.) ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতেন এবং সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
হাদিস:
হজরত হাসান (রা.) বলেন—
“রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে উৎসবের দিন সুন্দর পোশাক পরতে আদেশ করতেন।” (বায়হাকী)
৪. ঈদের নামাজের আগে মিষ্টি কিছু খাওয়া
ঈদুল ফিতরের দিন নামাজে যাওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর বা মিষ্টি কিছু খাওয়া সুন্নত।
হাদিস:
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন—
“নবী (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে কয়েকটি খেজুর খাওয়া পর্যন্ত ঈদগাহে যেতেন না। আর তিনি বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন।” (বুখারি)
আমল:
খেজুর (৩, ৫, ৭) বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া।
৫. ফিতরা প্রদান করা (সদকাতুল ফিতর)
ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা ফরজ।
কোরআন:
“যে ব্যক্তি খুশি মনে পবিত্রতা অর্জন করতে চায়, সে যেন ফিতরা আদায় করে।” (সুরা আ’লা: ১৪-১৫)
হাদিস:
“রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজের আগে ফিতরা দিতে আদেশ করেছেন।” (বুখারি)
ফিতরার পরিমাণ:
৬. ঈদের নামাজ আদায় করা
ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালনীয়)।
হাদিস:
“নবী (সা.) কখনো ঈদের নামাজ ত্যাগ করেননি।” (বুখারি)
নিয়ম:
দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ
ছয়টি অতিরিক্ত তাকবির (তিনটি প্রথম রাকাতে, তিনটি দ্বিতীয় রাকাতে)
৭. তাকবির বলা
ঈদুল ফিতরের দিনে তাকবির বলা মুস্তাহাব।
তাকবির:
اللّهُ أَكْبَرُ، اللّهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلَـٰهَ إِلاَّ اللّهُ، وَاللّهُ أَكْبَرُ، اللّهُ أَكْبَرُ وَلِلّهِ الْحَمْدُ
আমল:
ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির পড়া।
৮. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা
নবী (সা.) ঈদের নামাজের জন্য এক রাস্তা দিয়ে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।
হাদিস:
“নবী (সা.) ঈদের দিন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।” (বুখারি)
আমল:
সম্ভব হলে নামাজের পর অন্য পথ দিয়ে বাড়ি ফেরা।
৯. একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো
মুসলমানদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম।
সুন্নত দোয়া:
تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ
“আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।”
আমল:
কোলাকুলি বা হ্যান্ডশেক (গুনাহের সীমা অতিক্রম না করে)
পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানো
১০. গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা
ঈদের আনন্দ সবাইকে ভাগ করে নেওয়া উচিত।
হাদিস:
“ঈদের দিন দরিদ্রদের সাহায্য করো, যাতে তারাও আনন্দ উপভোগ করতে পারে।” (তিরমিজি)
আমল:
দান-সদকা করা
গরিবদের খাবার দেওয়া
১১. অপচয় ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
ঈদের আনন্দ যেন গুনাহের কাজে ব্যয় না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
হাদিস:
“প্রকৃত ঈদ সেই দিনের, যেদিন কোনো গুনাহ করা হয় না।” (ইবনে হাজার)
আমল:
গান-বাজনা ও অপচয় থেকে দূরে থাকা
ইসলামি শিষ্টাচার বজায় রাখা
১২. শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা (ঈদের পরের আমল)
ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখবে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।” (মুসলিম)
আমল:
ঈদের পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা (একসাথে বা আলাদা আলাদা)
উপসংহার
ঈদুল ফিতর শুধু খুশি ও আনন্দের দিন নয়, বরং এটি রমজানের ইবাদতের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। যদি আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসারে ঈদ পালন করি, তাহলে এটি শুধু দুনিয়াবি আনন্দই হবে না, বরং আখিরাতের জন্যও সওয়াবের কাজ হবে।